ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। ব্যয়বহুল প্রোডাক্ট আর কেমিক্যাল ছাড়াই আপনার ত্বকের প্রাণবন্ত আভা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আপনার রান্নাঘরেই লুকিয়ে আছে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর রহস্য।
এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনার ঘরে থাকা সহজ কিছু উপকরণ দিয়ে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে ফেসপ্যাক বানানো শিখতে পারবেন। এছাড়াও আপনি শিখতে পারবেন কিভাবে, কি পরিমানে, কোন কোন উপকরণ ব্যবহার করে একটি কার্যকরী ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়।চলুন আর দেরি না করে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল সঠিকভাবে আপনার ত্বককে পরিষ্কার রাখা। ময়লা তেল এবং মেকআপের আবরণ ত্বকের স্বাস্থ্যকর কোষগুলোকে ঢেকে ফেলে। যার ফলে নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ দেখায় আপনার ত্বককে। বেসন ও দই এর প্যাক আপনার ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী ফেসপ্যাক হবে। এক চামচ বেসনের সাথে প্রয়োজন মতো টক দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপর ফেস প্যাকটি মুখে লাগিয়ে শুকানোর পর ভালোভাবে আপনার ফেসকে পরিষ্কার করে নিন।
বেসন আপনার ত্বক থেকে তৈলাক্ত ভাব, ময়লা দূর করে এবং দই এর ল্যাকটিক অ্যাসিড আপনার ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি ফেসপ্যাক। গোলাপজল ও মুলতানি মাটির মাধ্যমে ফেসপ্যাক তৈরি করে, ফেসপ্যাক টি ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বক এর উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। এক চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে লাগানোর পর শুকিয়ে এলে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ ব্রণের জন্য কোন সিরাম ভালো
মুলতানি মাটি ত্বকের গভীর থেকে বিষাক্ত উপাদান গুলোকে বের করে আনে এবং সেই সাথে গোলাপজল প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে কার্যকরী একটি ফেসপ্যাক। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এটি ত্বকের ছিদ্রগুলো খুলে দেয় এবং পরিষ্কার শ্বাস নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য মূল মন্ত্র হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও দিনে তিনবার এবং বাহিরে থেকে এসে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। এতে করে বাহিরে থাকাকালীন আপনার ত্বকের যেসব ময়লা জমা হয়, সেগুলো পরিষ্কার হয়ে আপনার ত্বকের ছিদ্রগুলোকে মুক্ত রাখে। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করুন
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য মৃত কোষ আমাদের ত্বক থেকে দূর করা অন্যতম একটি শর্ত। নিয়মিত স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে আমাদের ত্বকের মৃত কোষগুলো সরিয়ে নতুন উজ্জ্বল কোষগুলোকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। চিনি ও মধুর স্ক্রাব এর মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায় এবং এটি খুবই কার্যকারী একটি স্ক্রাবীং হিসেবে কাজ করে। এক চামচ চিনির সাথে এক চামচ মধু ও অল্প একটু লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি খুব আস্তে আস্তে করে মুখে মেসেজ করুন।
চিনি প্রাকৃতিক এক্সফোলীয়েণ্ট হিসেবে কাজ করে। মধু ত্বকে ময়েশ্চারাইজার করে এবং লেবু ত্বকের দাগ ও কালো ছোপ দাগ গুলো দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকরী একটি স্ক্রাবিং। এছাড়াও ওট্মীল ও কলার স্ক্রাব ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী একটি স্ক্রাবিং হিসেবে কাজ করে। এক টেবিল চামচ বেটে নেওয়া ওটমিলের সাথে পাকা কলার এক টুকরো ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এটি ত্বকে লাগিয়ে কমপক্ষে 15 মিনিট পর হালকা হাতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ওট মিল ত্বকের জন্য মৃদু স্ক্রাবার এবং কলা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে থাকে। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কফি গ্রাউন্ডস স্ক্রাব আমাদের ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে দূর করতে সাহায্য করে থাকে। ব্যবহৃত কফির ভুসি বা কফির গুড়ার সঙ্গে নারিকেল তেল বা দই মিশিয়ে একটি স্ক্রাবিং তৈরি করুন। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের রক্ত সংবহন গুলোকে উজ্জীবিত করে এবং একটি প্রাকৃতিক গ্লো আনতে সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার এই স্ক্রাবিং ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য দারুন ফল মিলবে।
মধুর অলৌকিক গুণাবলীর মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
মধু একটি প্রাকৃতিক শুধু মিষ্টি উপাদানই নয়। এটি একটি অসাধারণ ত্বক পরিচর্যার উপাদান হিসেবেও কাজ করে। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে এটিকে অনন্য করে তোলে। খাঁটি মধুর মাস্ক আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। সরাসরি খাঁটি মধু প্রয়োজনে একটু গরম করে নরম করবেন। এরপর মুখে ও গলায় লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
মধু ত্বকে গভীর করে ময়েশ্চারাইজার করতে সাহায্য করে। মধু আমাদের ত্বকে জীবাণুমুক্ত করে এবং প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তোলে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতার বৃদ্ধির উপায় হিসেবে একটি সহজ ও সরল পদ্ধতি। মধু ও দারুচিনির প্যাক বানানোর মাধ্যমেও আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে। এটিও একটি কার্যকরী প্যাক হিসেবে কাজ করে। এক চামচ মধুর সাথে আধা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে নেই। এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে কমপক্ষে 10 থেকে 15 মিনিট পর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
দারুচিনি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখাতে সাহায্য করে। মধু ও হলুদের প্যাক ত্বকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ানোর মাধ্যমে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এক চামচ মধুর সাথে এক চিমটি কাঁচা হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে আপনার মুখে লাগিয়ে শুকানোর মতো ধুয়ে ফেলুন। হলুদ তার এন্টি ইনফ্লেমেটোড়ী গুণের জন্য বিখ্যাত। যা ত্বকের জ্বালাপোড়া ও লাল ভাব কমাতে সাহায্য করে। মধুর সাথে মিলে ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ঘরোয়া উপায় হিসেবে এই প্যাকটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
দই ও দুধের ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
আমরা সকলেই জানি দুধ ও দই এর মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড বিদ্যমান থাকে। এই ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে সহজলভ্য ও কার্যকরী একটি উপায়। এক চামচ টক দই নিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুআ। দই এর ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে আনে এবং ত্বকের রং ফর্সা করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতার বৃদ্ধির উপায় এর একটি ক্লাসিক পদ্ধতি।
বেসন ও দই এর পেক সম্পর্কে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই কন্বিনেশন
টি ত্বক পরিষ্কার এর পাশাপাশি এক্সফোলিয়েট করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির
উপায় হিসেবে দুটি কাজ একসঙ্গে করে থাকে। কাঁচা দুধের ব্যবহার করেও ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করানো সম্ভব। একটি কটন বল কে কাঁচা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখে ও
গলায় লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ফ্যাট ত্বককে
কোমল মসৃণ ও উজ্জ্বল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা
বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ব্যবহারযোগ্য একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।
লেবুর রসের কার্যকারিতার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
লেবুর রস আমাদের ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক ব্লিচিং থাকার জন্য আমাদের ত্বকের দাগ, কালো ছোপ ও ট্যাঁন কমাতে সাহায্য করে। তবে লেবু ব্যবহারের পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক চামচ লেবুর রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। লেবু ত্বকের দাগ দূর করবে আর মধু ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করবে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য খুবই শক্তিশালী একটি উপাদান। লেবু ও গোলাপজলের টোনার ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সমান পরিমাণ গোলাপ জল ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি বোতলে তুলে রাখুন। এটি ত্বকে
তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিগমেন্টেশন কমায়। এক চামচ চন্দন কাঠের গুরার সাথে
লেবুর রস মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে
ভালোভাবে ধৌত করুন। চন্দন আমাদের ত্বককে শীতল ও শান্ত রাখে এবং লেবু আমাদের
ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। সতর্কতা আবশ্যক, শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকে লেবু কম
পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের ক্ষতি এড়ানোর জন্য লেবুর ব্যবহারে সর্তকতা
জরুরী।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অ্যালোভেরার যাদুকরি ক্ষমতা
এলোভেরা হলো একটি সর্বগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। যার মধ্যে সকল প্রকার গুণী বিদ্যমান রয়েছে। এলোভেরা ত্বকের শীতল ময়শ্চারাইজ এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। এর এন টি এজিং এবং নিরাময়কারী গুনাবলি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকর। তাজা এলোভেরা পাতার ভিতরে স্বচ্ছ জেল বের করে সরাসরি মুখে ও গলায় লাগাবেন। 20 30 মিনিট পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।
এটি ত্বককে হাইড্রেট করবে, জ্বালাপোড়া কমাবে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেবে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে কোমল এবং সহজ একটি উপায়। অ্যালোভেরার সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগাবেন। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ ব্রণের জন্য কোন সিরাম ভালো
অ্যালোভেরা মধু ও দই এর প্যাক খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরা মধু ও দই এই তিনটি উপাদান সমান পরিমাণে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এটি সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করবেন। এটি আপনার ত্বককে একই সাথে পরিষ্কার মশ্চারাইজড এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য কতি। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরার প্রত্যেকটি উপাদানের কোন জুড়ি নেই। এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।
হলুদের গুণাগুণ এর মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
হলুদ শুধু আমাদের রান্না করার জন্য মসলাই নয়। এটি একটি চমৎকার ত্বক পরিচর্যার উপাদান। এর এন্টি সেফটি এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে। হলুদ ও দুধের পেস্ট তৈরির মাধ্যমে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। এক চিমটি হলুদের সাথে প্রয়োজনমতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
এটি ত্বকের নিখুঁততা বৃদ্ধি করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর আভা দেয়। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের খুবই কার্যকরী একটি অংশ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও হলুদ ও চন্দনের প্যাক একটি চমৎকার হিসেবে কাজ করে। এক চামচ চন্দন গুড়ার সাথে এক চিমটি হলুদ ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট ত্বকের উপর আলতো করে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে যাবার পর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এই প্যাক ত্বককে শীতল করতে সাহায্য করে।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এক চিমটি হলুদের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। অবশ্যই মনে রাখবেন হলুদ ত্বকের সাময়িক দাগ রাখতে পারে। যা পরে ধীরে ধীরে চলে যাবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য হলুদ খুবই ভালো কাজ করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের অভ্যাস
ত্বকের স্বাস্থ্য বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যত্নের ওপরও নির্ভর করে থাকে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য শুধু বাইরে থেকে নয় ভিতর থেকেও যত্ন করতে হবে। প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। কারণ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতার বজায় থাকে। দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে । পানি পান করার মাধ্যমে আমাদের শরীরের টক্সিক পদার্থ বের করে দেয়।
এছারাও ত্বককে হাইড্রেড রাখে যা ত্বকের প্রাণবন্ত তা ফিরিয়ে আনে। এটি ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ
খাবার খেতে হবে। ভেরি, বাদাম, সবুজ শাকসবজি এবং গাজর ইত্যাদি খাবার ত্বককে
বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে থাকে। ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম এর মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
পর্যাপ্ত ঘুমকে প্রাকৃতিক বিউটি থেরাপি বলা হয়। ঘুমের সময় আমাদের ত্বক নিজে থেকে মেরামত ও পুনর্জীবিত হয়ে থাকে। ঘুমানোর সময় আমাদের ত্বক নিজে থেকে কোলাজেন উৎপাদন করে। গভীর ঘুমের সময় শরীরের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যা ত্বকের এলাস্টিসিটি এবং উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে ঘুম অত্যন্ত জরুরি। রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় ঘুমের মাধ্যমে।
ভালো ঘুম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে যার ফলে ত্বক পুষ্টি পায় এবং একটি প্রাকৃতিক
গ্লো চলে আসে ত্বকের মধ্যে। চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প
নেই। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের নিচের ফোলা ভাব ও ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে
থাকে। যা আপনার চেহারা কে সতেজ ও উজ্জ্বল দেখায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮
ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
ব্যায়াম ও ইয়োগা করার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম শুধু শরীরের জন্য ভালো তা নয়। এটি ত্বকের জন্য দারুন উপকারী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি। ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ত্বকের অভ্যন্তরে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। দেহ থেকে টক্সিক বের হয়ে যায় নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে।
ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায়। যা ত্বককে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। ইয়োগা ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, একজিমা ইত্যাদির জন্য দায়ী। তাই চাপমুক্ত থাকা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট করার পাশাপাশি বলিরেখা, কালো দাগ এবং ত্বকের ট্যাঁনের জন্য দায়ী হয়ে থাকে । তাই বাইরে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। ঘর থেকে বের হলে সান্সক্রিন ব্যবহার করুন। মেঘলা দিন হলেও এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি যুক্ত একটি ভালো সানস্ক্রিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যদি দীর্ঘ সময় বাইরে থাকেন তাহলে প্রতি দুই তিন ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ ব্রণের জন্য কোন সিরাম ভালো
কিছু প্রাকৃতিক তেল যেমন নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, সীট ওয়েল এ প্রাকৃতিক এসপিএফ থাকে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে সবচেয়ে কার্যকরী এবং সুরক্ষা দিয়ে থাকে। নিয়মিত বাহিরে বের হওয়ার পূর্বে সান্সক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকে আলাদা করে একটি সুরক্ষা পর্দা দিয়ে থাকে। যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করে থাকে। ত্বক ডেমেজ রক্ষা করে থাকে।
শেষ কথাঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানা এখন আপনার জন্য সহজ। এই সমস্ত প্রাকৃতিক উপাদান এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো আপনার দৈনন্দিন রুটিন এর অংশ করে নিন। মনে রাখবেন ত্বকের উজ্জ্বলতার বৃদ্ধির উপায় এর জন্য প্রয়োজন হয় ধৈর্য ও নিয়মিততা। একদিনই পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনি আপনার ত্বকে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পারবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিন সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন।
আপনার ত্বকই হলো আপনার ব্যক্তিত্বের প্রথম ও সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ। তাই এর যত্ন
নেওয়া কখনোই অপচয় মনে করবেন না। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিন। এই যাত্রায়
আপনার নিজস্ব ত্বকের ধরন বোঝা এবং তার জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক উপাদান বেছে
নেওয়ায় হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
নিয়ে এই আলোচনা আপনার জন্য উপকারী হয়েছে বলে আমরা আশা করি।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url