লক্ষ্মীর পাঁচালী, দোল পূর্ণিমা পালনের নিয়ম নীতি

 

দোল পূর্ণিমার সেই নির্মল নিশীথে, পুরো আকাশ জুড়ে যখন চাঁদনী আলোর এক অপার্থিব আভা ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনই যেন বাংলার লোক কথার পাতাগুলো থেকে মিথ্যা আর সত্যের সীমানা মুছে যায়।



লক্ষ্মীর পাচালির বর্ণনাতে,  স্বয়ং লক্ষীকে ধনসম্পদের দেবী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বিশেষ রাতে স্বয়ং ধন সম্পদের দেবী লক্ষী পৃথিবীতে পদার্পণ করেন তার ভক্তদের আশীর্বাদ বিতরণ করার জন্য।  আসুন ডুব দেই সেই রহস্যময় রাতের গল্প

পেজ সূচিপত্রঃ লক্ষ্মীর পাঁচালী, দোল পূর্ণিমা পালনের নিয়ম নীতি

লক্ষ্মীর পাঁচালী, দোল পূর্ণিমা পালনের নিয়ম নীতি

বঙ্গ সংস্কৃতির মধুময় বন্ধন দোল পূর্ণিমার নিশির নির্মল আকাশ বাঙালি হৃদয়ে বয়ে নিয়ে আসে এক অপার প্রশান্তি। এই পবিত্র রাতেই লক্ষ্মীর পাঁচালীর মধুর ধনী গ্রাম বাংলার অলিতে গলিতে ভেসে বেড়ায়। শিশির ভেজা সকালের বাতাসে মিশে থাকে ভক্তির সুগন্ধ। এটি বাংলার সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। লক্ষ্মীর পাঁচালীর মাধ্যমে মা লক্ষ্মীর প্রার্থনা করা হয়। দোল পূর্ণিমার নির্মল আকাশের নিচে এই আধ্যাত্মিক পরিবেশ ভক্তদের মনকে করে তোলে নির্মল ও শান্ত।

ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিশেষ প্রসাদ। এছাড়াও মাটির দ্বীপ জ্বেলে সাজানো হয় পূজার স্থান এবং পুরো বাড়ি।এই রীতির মধ্যে লুকিয়ে আছে বাংলার গ্রামীণ জীবনের সরলতা। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা এই প্রথা আজও সমান ভাবে চলমান। এটি আমাদের সংস্কৃতির জীবন্ত ইতিহাস হিসেবে টিকে আছে। প্রত্যেকটি বছরে দোল পূর্ণিমায় লক্ষ্মীর পাঁচালীর মাধ্যমে এই ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায় এবং সবাই আনন্দে মেতে ওঠে।

আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা ইনকাম করুন বিকাশ পেমেন্টে

দোল পূর্ণিমার মহিমাঃ আকাশের সাথে আত্মার সংযোগ

দোল পূর্ণিমার রাত্রি বাংলা সংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে চলে। এই দিনে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে সমগ্র পৃথিবী। নির্মল আকাশে জ্যোৎস্নার খেলা একটি মায়াময় ও মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। হিন্দুদের বিশ্বাস যে এই রাতে দৈব শক্তি বা দেবতারা পৃথিবীতে নেমে আসে। লক্ষীর পাঁচালী পাঠের মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর  আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। দোল পূর্ণিমার নিশির নির্মল আকাশের নিচে এই প্রার্থনা বিশেষ শক্তি অর্জন করে।

অনেক মানুষ আবার সারাদিন উপবাস বা ব্রত পালন করেন এবং সন্ধ্যার প্রার্থনার পর তা ভেঙ্গে ফেলেন। এই রাতে বিশেষ পূজো প্রার্থনার মাধ্যমে ধন সম্পদের দেবীর কৃপা বা আশীর্বাদ লাভের আশা করা হয়।  এই দোল পূর্ণিমার আরেকটি নাম আছে তা হলো হোলি পূর্ণি। পরের দিনই পালিত হয় এই দোল পূর্ণিমার উৎসব। তাই এই পূর্ণিমা প্রস্তুতির ও একটি সময়। সমগ্র ভারতবর্ষে এই দিনটি বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্নভাবে পালিত হয়।

লক্ষীর পাঁচালীঃ মঙ্গলময়ী মায়ের ডাক

দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে একটি ভক্তিমূলক কবিতাকে মূলত লক্ষ্মীর পাঁচালী বলা হয়। লক্ষ্মীর পাঁচালী এটি একটি বাংলার  লোকোসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ অংশ। সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলারা সম্মিলিতভাবে এটি আবৃত্তি বা পাঠ করেন। এর মাধ্যমে তারা পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করে। লক্ষীর পাঁচালীর কথাগুলো খুব সরল ও হৃদয়গ্রাহী। এটি দেবি লক্ষ্মীর করুণা ও অনুগ্রহের কাহিনী বর্ণনা করে থাকে।

এই লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠের মাধ্যমে ভক্তরা তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দেবী লক্ষ্মীর নিকটে। অনেকের বিশ্বাস যে একনিষ্ঠ ভাবে পাঁচালী পাঠ করলে আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিছু অঞ্চলের সম্পূর্ণ সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে লক্ষ্মী পাঁচালী পাঠে অংশ নেয় এবং অনুষ্ঠান শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়ে থাকে। এই সম্মিলিত প্রার্থনা সামাজিক বন্ধন কে অনেক শক্তিশালী করে ও পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করে। এটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যকে উন্নীত ক।

নির্মল আকাশের নিচেঃ আধ্যাত্মিক প্রতীক

দোল পূর্ণিমার নির্মল আকাশ কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনাই নয়। বরং এটি মানসিক পবিত্রতা এবং আধ্যাত্মিক স্বচ্ছতার প্রতীক। হিন্দুদের বিশ্বাস যে পরিষ্কার আকাশ দেবতাদের বা দৈবশক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। অনেক আধ্যাত্মিক সাধক বা সন্ন্যাসী এই পূর্ণিমার রাত থেকে ধ্যানের জন্য বেছে নেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ একাগ্রতায় সাহায্য করে। চাঁদের আলোকে শুদ্ধিকরণ গুণযুক্ত বলে মনে করা হয়।

এইজন্যই অনেক অনুষ্ঠান পূর্ণিমা রাতে পালন করা হয়। এছাড়াও গ্রাম অঞ্চলে মানুষ প্রার্থনার জন্য বাইরে যেতে বিশেষ পছন্দ করেন। যেমন খোলা আকাশের নিচে চাঁদের আলোয় একটি স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই অভিজ্ঞতা একই সাথে বিনম্র এবং উদ্দীপক। প্রকৃতির কোলে বসে প্রার্থনা করার অনুভূতি অত্যন্ত প্রশান্তিদায়ক। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সাধু সন্ন্যাসী এই পূর্ণিমা রাতকেই তাদের ধ্যানের জন্য ও বিভিন্ন দেবদেবীর প্রার্থনার জন্য বেছে নিয়ে থাকেন।



লক্ষ্মীর পাঁচালীর ঐতিহ্যবাহী রীতি নীতি

লক্ষ্মীর পাঁচালীর সাথে জড়িত রীতিনীতি গুলো শতাব্দীর পর শতাব্দি ধরে বাঙালির সংস্কৃতিতে চলমান রয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি কেবল ধর্মীয় আচারই নয়, বরং এটি একটি আমাদের সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এর জীবন্ত দলিল। প্রতিটি পদক্ষেপে লুকিয়ে আছে আমাদের পূর্বপুরুষদের গভীর প্রজ্ঞা ও জীবন দিক নির্দেশনা। এটি আমাদেরকে শেখায় কিভাবে জীবনকে আমরা আরো অর্থপূর্ণভাবে পরিচালনা করতে পারব। এই ঐতিহ্যের সবচেয়ে সুন্দর দিকগুলো এর সম্মিলিত অংশগ্রহণ।

পুরো সম্প্রদায় একসাথে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। মহিলারা সম্মিলিতভাবে লক্ষীর পাঁচালী পাঠ করেন এবং লক্ষ্মী দেবীর প্রার্থনা করেন। আর পুরুষ সদস্যরা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আমরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হই। ছোট বড় থেকে শুরু করে সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা সম্পদের মধ্যে একটি শক্তিশালী একাত্মতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।

এই রীতি-নীতির মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে পারি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের পরিচয়, অনুভূতি প্রদান করতে পারে। এটি একটি জীবন্ত ঐতিহ্য, যা অবিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি তার মূল সারবস্তু ধরে রাখে।

লক্ষী পূর্ণিমার পূজোর প্রস্তুতি ও আয়োজনের বিশদ বিবরণ

লক্ষ্মী পূর্ণিমার পূজোর প্রস্তুতি শুরু হয় কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রথম পর্যায়ে সম্পূর্ণ ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। যা আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার প্রতীক। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন প্রস্তুত করা। যার মধ্যে প্রধানত রয়েছে নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, তিলের খাজা ও মুড়ির মোয়া। মাটির সাথে তৈরি সুস্বাদু মিষ্টান্ন মহিলারা বিশেষভাবে পুজোর স্থানটি সজ্জিত করেন।তারা হাতে আঁকেন জটিল আলপনা ও নকশা। যা সম্প্রীতি এবং কল্যাণের প্রতীক বয়ে আনে।ব্যবহার করা হয়,

কেবলমাত্র ঐতিহ্যবাহী উপকরণ। যেমন চালের গুড়া এবং প্রাকৃতিক রং। সমদ্রগৃহটি সজ্জিত করা হয় আম পাতা এবং কলাগাছের ডালপালা দিয়ে। যা উর্বরতা এবং প্রাচুর্যের প্রতিক। এছাড়াও লক্ষ্মী পূজায় ব্যবহৃত হয় দুর্বাঘাস ও ধান। পূজার একদিন আগে সংগ্রহ করা হয় সকল প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এর মধ্যে রয়েছে তাজা ফুল, বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা ধূপকাঠি এবং ঐতিহ্যবাহী তেলের বাতি। প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব প্রতিকী তাৎপর্য রয়েছে এবং প্রাচীন নির্দেশিকা বা নির্দেশনা অনুসারে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করা হয়। এই সুস্পষ্ট প্রস্তুতি প্রণালীই এই ঐতিহ্যের সৌন্দর্য এবং গভীরতা প্রদর্শন করে।

আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা ইনকাম করুন বিকাশ পেমেন্টে

লক্ষ্মীর পাঁচালী পূজার অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সামাজিক গুরুত্ব

লক্ষীর পাঁচালী দিন সকাল থেকে শুরু হয় বিশেষ কর্মকাণ্ড। অংশগ্রহণকারীরা স্নান করে বা গোসল করে পরিষ্কার নতুন জামা কাপড় পড়ে নেন। সাধারণত হলুদ বা সাদা রঙের ও লাল পাড়ের শাড়ি পরিধান করেন। যা পবিত্রতা এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। মহিলারা সম্মিলিতভাবে পূজার স্থানে একত্রিত হন এবং সমবেতভাবে লক্ষীর পাঁচালী পাঠ করা শুরু করেন। পাঠের সময় সম্পূর্ণ নীরবতা ও ভক্তি বজায় রাখা হয়। এরপর বিশেষ আরতি অনুষ্ঠিত হয়। যা ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা এবং শঙ্খ ধ্বনির সাথে মিলিত হয়। এই সম্মিলিত স্তব গান একটি শক্তিশালী আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করে, 

যা অংশগ্রহণকারীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অনেকেই গভীর আভ্যন্তরীণ শান্তি এবং আধ্যাত্মিক সংযোগের অভিজ্ঞতা লাভ করে। অনুষ্ঠান শেষ করে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এই সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি সামাজিক বন্ধন কে শক্তিশালী করে, পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করে এবং সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। এই ঐতিহ্যের মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ যেমন সত্যবাদিতা, উদারতা এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা সংক্রমিত হয়। এটি আমাদের সাধারণ মানবতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্যঃ ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে

লক্ষীর পাঁচালী একটি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর সাংস্কৃতি গুরুত্ব ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে যায়। বাংলার সংস্কৃতির অনেক উপাদানের মতই এটিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র রয়েছে। যা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আকর্ষণ করে। বিভিন্ন ধর্ম ও পটভূমির মানুষ প্রায়ই এই উদযাপনে অংশগ্রহণ করেন। যা একটি সম্মিলিত সম্প্রদায় বোধ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার অনুভূতি করে তোলে।

 বাংলার সংস্কৃতি বুননের এই উদার বৈশিষ্ট্য গুলো একটি স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বহন করে চলে। যা এই অঞ্চলের বউ শতাব্দী ধরে চলে আসা বহুত্ববাদী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে থাকে। এই ঐতিহ্যের মাধ্যমে সার্বজনীন মূল্যবোধ, যেমন সহানুভূতি, উদারতা, কৃতজ্ঞতা বোধ প্রচারিত হয়। যা সকল ধর্ম ও সংস্কৃতিতে প্রশংসিত হয়। এটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। যা সংস্কৃতিক সংলাপ প্রচার করে। 

একটি এমন বিশ্বে যা প্রায়ই ধর্মীয় বিভেদ দ্বারা বিভক্ত হয়ে থাকে। অনেক অহিন্দু অনুষ্ঠানে যোগ দেন, কারণ তারা অনুষ্ঠানটির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। সার্বজনীন মানবিক মূল্যবোধের উপর, গোষ্ঠী গত ধর্মীয় মতবাদ গুলির উপর নয়। এই আন্ত ধর্মীয় অংশগ্রহণ সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে এবং সাংস্কৃতির ঐতিহ্য কে প্রচার করে। এই সাংস্কৃতিক অনুশীলনের সার্বজনীন আবেদন নিহিত রয়েছে।

 তার মৌলিক মানবীয় আকাঙ্ক্ষার সাথে কথা বলার ক্ষমতার মাধ্যমে - সমৃদ্ধি শান্তি এবং সম্প্রদায়ের কল্যাণের স্বার্থে।এটি আমাদেরকে আমাদের মানবতা এবং সেই সাধারণ মূল্যবোধ গুলির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বা মনে করিয়ে দেয়। যা আমাদেরকে বিশ্বাস এবং ধর্মের ক্ষেত্রে বিভাজনের বিরুদ্ধে একত্রিত করে শক্তি হিসেবে কাজ করে। আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা সকলেই ভাই ভাই। একই রকম সুখ, সমৃদ্ধি এবং আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করে।

আধুনিক প্রেক্ষাপটঃ পরিবর্তনশীল সময়ে প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমান এই দ্রুতগতির ডিজিটাল যুগে লক্ষির পাঁচালীর মতো প্রাচীন ঐতিহ্য নতুন মাত্রা পেয়েছে। শহরের জীবনযাত্রার ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও এই অনুষ্ঠানটি তার প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে। বরং আরো সম্প্রসারিত হয়ে উঠেছে। অনেক অ্যাপার্টমেন্ট, কমপ্লেক্সে এখন সম্মিলিতভা লক্ষীর পাঁচালীর আয়োজন করা হয়। যা নগর জীবনে সম্প্রদায় বোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করছে।

 এবং সক্রিয়ভাবে তারা অংশগ্রহণ করতে তারাও অংশগ্রহণ করছে।প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে এই ঐতিহ্য আধুনিক রুপে লাভ করেছে। অনেক পরিবার এখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দূরবর্তী আত্মীয়দের সাথে যুক্ত হয়ে অথবা প্রবাসীদের সাথে যুক্ত হয়ে সম্মিলিতভাবে পাঁচালী পাঠ করেন। ডিজিটাল প্লাটফর্মে লক্ষ্মীর পাঁচালী অডিও রেকর্ডিং এবং লেখালেখির মাধ্যমে সহজলভ্য হয়েছে। যা নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করতে সাহায্য করছে।

 এমনকি ডিজিটাল প্লাটফর্মে লক্ষ্মীর পাঁচালীর অডিও রেকর্ডিং এবং লিখিত সম্পদ সহজলভ্য হয়েছে। যা নতুন প্রজন্মকে এই অতীতের সাথে পরিচিত করতে সাহায্য করছে। এমনকি কিছু তরুণ তরুণী শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু তৈরি করছেন। এর জন্যএই সাংস্কৃতিক অনুশীলনের স্থায়িত্ব নিহিত রয়েছে। এর মৌলিক সারবস্তু সংরক্ষণ করার পাশাপাশি খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার মধ্যে।

এটি প্রমাণ করে যে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি কিভাবে তার মৌলিক মূল্যবোধ হারানো ছাড়াই আধুনিক পরিবেশে বিকশিত হতে পারে। লক্ষীর পাঁচালী কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা। যা সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পুনর্ বিন্যাস করে চলেছে। এটি আমাদের শেখায় যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা পাশাপাশি থাকতে পারে এবং পরস্পরেকে সমৃদ্ধি করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা ইনকাম করুন বিকাশ পেমেন্টে

শেষ কথাঃ লক্ষ্মীর পাঁচালী, দোল পূর্ণিমা পালনের নিয়ম নীতি

দোল পূর্ণিমার নির্মল আকাশ এর নিচে লক্ষ্মীর পাঁচালীর মধুর ধ্বনি বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত ধারা হিসেবে বিরাজমান করে। এই পবিত্র অনুষ্ঠানটি কেবল ধর্মীয় রীতিনীতি নয় বরং এটি আমাদের গ্রামীন জীবন সম্প্রদায় এর দর্পণ স্বরূপ। জ্যোৎস্না ভরা রাতে নীরবতা ভেদ করে যখন পাঁচালীর সুর ভেসে আসে, তখন মনে হয় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের কণ্ঠস্বর আজও ধ্বনিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করি।

লক্ষ্মীর পাঁচালী আমাদের শেখায় যে প্রকৃত সম্পদ শুধু আংশিক স্বচ্ছলতায় নয় বরং মানবিক মূল্যবোধ সামাজিক সম্প্রীতি এবং পারিবারিক বন্ধনের মধ্যে নিহিত থাকে। দোল পূর্ণিমার রাতে এই পবিত্র নিশিতে আমরা শুধু দেবী লক্ষীর কাছেই প্রার্থনা করি না বরং আমাদের অন্তরের সকল প্রকার কুপ্রবৃত্তি ও নেতিবাচক পরিশুদ্ধ করে থাকি। এই আধ্যাত্মিক অনুশীলন আমাদের ব্যক্তি গত জীবনকে গড়ে তোলে আরো অর্থপূর্ণ এবং সুসজ্জিতপূর্ণ। এছাড়াও সামাজিক জীবনকে করে তোলে আরও সম্প্রীতিপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি গিগস্পারকলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url