রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি
প্রতি রাতে কি আপনি জেগে থাকেন, মুভি বা গেমসে? রাত জাগাকে কি শুধু অভ্যাস মনে করেন? রাত জাগার নীরব বিপদ সম্পর্কে জানেন কি? এই নীরব ঘাতক ধীরে ধীরে নষ্ট করছে আপনার শরীর, স্মৃতিশক্তি ও মন ভালো রাখার ক্ষমতা।
রাত জাগার ফলে আপনার শরীরে শুধু ক্লান্তি আসেনা, এটি ডেকে আনে ডায়াবেটিস, মুড সুইং ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো ভয়াবহ রোগ। আপনার প্রিয় রাতগুলিই কি আপনাকে ধ্বংস করছে? চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে রাত জাগার ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ রাত জাগার ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি
- রাত জাগার ক্ষতিকর দিকঃ অন্ধকারের যে মূল্য আপনাকে দিতে হয়
- হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাবঃ
- মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতার উপর মারাত্মক প্রভাব
- ওজন বৃদ্ধি ও স্থুলতাঃ অদৃশ্য ভাবে বাড়ছে আপনার মেদ
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ ইন্সুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়াঃ
- মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ হতাশা ও বিষণ্নতার দুষ্ট চক্র
- ত্বকের অকাল বার্ধক্যঃ আপনার সৌন্দর্যকে অকালে নষ্ট করে।
- যৌন ইচ্ছা এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব।
- হজম শক্তির ব্যাঘাতঃ এসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।
- রাত জাগার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ
- রাত জাগার ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ
- সামাজিক এবং সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাবঃ
- শেষ কথাঃ রাত জাগার ক্ষতিকর দিক
রাত জাগার ক্ষতিকর দিকঃ অন্ধকারের যে মূল্য আপনাকে দিতে হয়
একটি নিস্তব্ধ, নিষ্ঠুর রাত। চারপাশে শুধু নীরবতা। এই সময়টাই অনেকের কাছে মনে হয় সর্বাধিক উৎপাদনশীল, সর্বাধিক নিজস্ব। হয়তো অফিসের কাজের চাপ, হয়তো পরীক্ষার পড়ার ভিড়, অ মানবদেহ একটি জটিল তথাপি সুষম্মনিত সুষমন্তথবা শুধুই একলা সময়টাকে উপভোগ করার নেশা। যেকোনো কারণেই হোক না কেন, রাত জাগা আমাদের অনেকেরই একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এই যে আমরা মনে করি রাতের নীরবতা আমাদের বেশি কাজ করিয়ে নিচ্ছে। এই ভাবনা কি আসলে ভুল? চিকিৎসা বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে উত্তরটি একটাই আসে। হ্যাঁ, এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। রাত জাগার ক্ষতিকর গুলো শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরই নয়, মানসিক সুস্থতা, সামাজিক জীবন, এমনকি আমাদের উপরও গভীর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এটি ধীরে ধীরে নিঃশব্দে আমাদের জীবনী শক্তিকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। এই আর্টিকেলটিতে রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে। আপনি জানতে পারবেন, কিভাবে একটি ছোট্ট অভ্যাস আপনার পুরো জীবন যাপনের উপর আঘাত হানতে পারে। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া আজকের এই ব্যস্ত জীবনে অত্যন্ত জরুরী।
হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাবঃ
মানব দেহ একটি জটিল তথাপি সুসমন্বিত যন্ত্র। এই যন্ত্রটি সচল ও সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ঘুম অত্যাবশ্যক। যখন আপনি নিয়মিত রাত জাগেন তখন আপনার হৃদযন্ত্রই প্রথমে তার প্রতিবাদ জানায়। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে ভয়াবহ ভাবে পরে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ও রক্তনালীর উপর। ঘুমের সময় আমাদের হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কিছুটা কমে যায়।
যা হৃদযন্ত্র কে বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেয়। কিন্তু রাত জাগার কারণে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে থাকে।যার কারণে হৃদযন্ত্র ক্রমাগত একটি চাপের মধ্যে থাকে, রক্তচাপ তখন বাড়তে থাকে। এর ফলে ধমনীতে চাপ বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে রক্তনালী গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শুধু তাই নয় দীর্ঘ মেয়াদী রাত জাগার অভ্যাস করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো জীবনঘাতী অবস্থার কয়েক গুণ ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ছয় থেকে সাত ঘন্টার কম ঘুমান তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, পর্যাপ্ত ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় 48% বেশি হয়ে থাকে। সুতরাং রাত জাগার ক্ষতিকর দিকটি হৃদযন্ত্রের জন্য একেবারেই উপেক্ষা করার মত নয়।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উপর মারাত্মক প্রভাবঃ
আপনি যদি মনে করেন রাত জাগলে বেশি কাজ করা যায়, তবে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ
ভুল। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি আপনার মস্তিষ্কের সক্ষমতার উপর পড়ে। ঘুম
আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি রক্ষণাবেক্ষণের সময়। এই সময়ে মস্তিষ্কে দিনভর
অর্জিত তথ্যগুলো সংগঠিত করে, মেমোরি মজবুত করে এবং বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বের
করে দেয়। রাত জাগলে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
এর ফলাফল কি হয় সেই সম্পর্কে জেনে নিনঃ
-
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ঃ নতুন কিছু শেখা এবং তা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
-
মনোযোগ ও একাগ্রতা কমে যায়ঃ কোন কাজে মনোযোগ করে রাখা দুষ্কর হয়ে ওঠে।
সহজেই মন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
-
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়ঃ জটিল সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে
হিমসিম খেতে শিম। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- সৃজনশীলতা হ্রাস পায়ঃ নতুন আইডিয়া, নতুন চিন্তা ভাবনার উন্মেষ ঘটে না।
মূলত রাত জাগা আপনাকে একজন ধীর গতির, অদক্ষ এবং একজন অউৎপাদনশীল কর্মীতে পরিণত করে দেয়। যা সম্পূর্ণ আপনার ধারণার বিপরিত। শুধুমাত্র এই রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব গুলো আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত জীবন কে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
আরো পড়ুনঃ ডিপোজিট ছাড়া ইনকাম।
ওজন বৃদ্ধি ও স্থুলতাঃ অদৃশ্য ভাবে বাড়ছে আপনার মেদ
এটি হয়তো অনেকের কাছে অবাক করার মতো তথ্য যে রাত জাগার সাথে ওজন বৃদ্ধির
সরাসরি সম্পর্ক আছে। হ্যাঁ, রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে এটি একটি
উল্লেখযোগ্য বিষয়। যখন আপনি রাত জাগেন তখন আপনার শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট
হয়ে যায়। বিশেষ করে আপনার শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন প্রভাবিত হয়।
- ঘ্রেলিনঃ এই হরমোন খুধা বাড়ায়। রাত জাগলে এই হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে আপনার বারবার ক্ষুধা লা। বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর ও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হয়।
- লেপটিনঃ এই হরমোন মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে, আপনি পূর্ণ বোধ করছেন। রাত জাগলে এই হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, ফলে আপনি বেশি খেয়েও তৃপ্তি পান না।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ ইন্সুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করা।
রাত জাগার সাথে ডায়াবেটিসের একটি গভীর সম্পর্ক আছে। আমাদের শরীরের একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি আছে, যাকে জৈবিক দৈনিক ছন্দ বা শরীরের প্রাকৃতিক ঘুম জাগরণের চক্র বলে। এই জৈবিক ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে কখন আমাদের ঘুমানো উচিত, কখন জাগা উচিত এবং কখন খাবার খাওয়া উচিত। রাত জাগার কারণে এই প্রাকৃতিক ছন্দটি সম্পূর্ণভাবে বিগ্নিত হয়।
এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা এবং কার্যকারিতার উপর। ইনসুলিন হলো সেই হরমোন যা রক্তের শর্করাকে আমাদের কোষে পৌঁছে দেয় শক্তি হিসেবে ব্যবহারের জন্য। রাত জাগলে শরীরের কোষের ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, একে ইনসুলিন রেসিস্টেন্স বলে।
এর ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের রোগীর প্রবণতা বেড়ে যায়। গবেষণা প্রমাণিত যারা রাত জাগেন বা শিফটে কাজ করেন, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সুতরাং রাত জাগার দিকটি আপনার শরীরের চিনিকে কিভাবে প্রক্রিয়া করতে হয় তাতেও হস্তক্ষেপ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়াঃ
আপনার শরীর একটি দুর্গের মত, আর আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউনিটি
সিস্টেম হল সেই দুর্গের প্রহরী। এই প্রহরীকে সচল ও শক্তিশালী রাখার জন্য ঘুম
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরে সাইটোকাইন নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়।
এই প্রোটিন গুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, প্রদাহ কমাতে এবং সামগ্রিক রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রাত জাগার ক্ষতিকর অভ্যাস এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভেঙ্গে দেয়। যখন আপনি নিয়মিতভাবে কম ঘুমান, তখন আপনার শরীর পর্যাপ্ত সাইটোকাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইমিউনিটি সেল (যেমন টি সেল) উৎপাদন করতে পারে না। ফলে আপনার শরীর সাধারণত সর্দি, কাশি, ফ্লু থেকে শুরু করে যে কোন সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভাবে লড়াই করতে পারে না।
ফলে আপনি খুব সহজেই বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই যে কোন গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াও অনেক ধীরগতির হয়ে পড়ে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি রাত জাগার কারণে অটোইমিউনিটি ডিজিজের মতো জটিল রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব তাই আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল করে দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিঃ হতাশা ও বিষণ্নতার দুষ্ট চক্র
রাত ও অন্ধকার প্রায়ই দুঃখ একাকীত্ব এবং নেতিবাচক চিন্তার সাথে সম্পর্কিত।
যখন আপনি রাত জাগেন, তখন আপনার মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রগুলো
বিঘ্নিত হয়। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব তাই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর
ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। ঘুমের অভাবে সেরোটনিন, ডোপামিন এবং অন্যান্য
নিউরোট্রান্স মিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
যা আমাদের মেজাজ, অনুভূতি এবং আনন্দ বোধের জন্য দায়ী। এর ফলেঃ
-
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়ঃ ছোটখাট বিষয়েও রেগে যাওয়া, ধৈর্য কমে যাওয়া।
-
উদ্বেগ বেড়ে যায়ঃ ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা, হতাশা বোধ করা
- বিষন্নতার ঝুঁকি বাড়েঃ নিয়মিতভাবে দুঃখবোধ করা, কাজে আগ্রহ হারানো, নিরাশা বোধ করা।
আরো পড়ুনঃ ডিপোজিট ছাড়া ইনকাম।
ত্বকের অকাল বার্ধক্যঃ আপনার সৌন্দর্যকে অকালে নষ্ট করে।
"সৌন্দর্য ঘুম" এই কথাটিতে কোন অতিরঞ্জন নেই। রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলো আপনার ত্বকের উপর স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান হয়। ঘুমের সময় আমাদের শরীরে কোলাজেন নামক এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে। যা ত্বককে টানটান, স্থিতিস্থাপক এবং যৌবনদীপ্ত রাখে। এছাড়াও এই সময় ত্বকের কোষ গুলোর মেরামত কাজও চলে। রাত জাগলে এই প্রক্রিয়া বাধা প্রাপ্ত হয়। কোলাজেনের উৎপাদন কমে যায়, ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়।
ফলাফলঃ
- চোখের নিচে কালো দাগ এবং খোলা ভাব।
- ত্বক নিস্তেজ ফেকাসে এবং প্রাণহীন দেখা।
- চামড়ায় ভাজ এবং বলে রেখার আগাম উপস্থিতি।
- ত্বক খসখসে এবং অমসৃণ হয়ে যাওয়া।
যৌন ইচ্ছা এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব।
রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও প্রভাবিত করে। ঘুমের অভাবে যৌন হরমোনের উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে যৌন ইচ্ছা খুবই কমে যা। ফলে পুরুষত্বহীনতার সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং শুক্রাণুর গুণগত মানও খারাপ হয়ে যায়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোজেন এবং অন্যান্য প্রজনন সংক্রান্ত হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে ঋতু চক্র অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং রজঃনীবৃত্তির লক্ষণ গুলি আগেভাগেই দেখা দিতে পারে। সুতরাং একটি সুস্থ যৌন জীবন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ও নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম একান্তভাবে অপরিহার্য। রাত জাগার ক্ষতিকর অভ্যাসটি এই দিকটিকেও ধ্বংস করে দেয়।
হজম শক্তির ব্যাঘাতঃ এসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।
আপনার পেট এবং অন্ত্র একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এগুলি জানে কখন পাচক রস মিশ্রণ করতে হবে, কখন খাদ্য চলাচলের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। রাত জাগার কারণে এই পুরো ব্যবস্থাটি অচল হয়ে যায়। রাতের বেলা খাবার খাওয়ার পরেই আপনি ঘুমিয়ে না পড়লে পেটে গ্যাস্ট্রিক এসিডের উৎপাদন বেশি হয়।
যা অন্ননালীতে উঠে এসে বুকে জ্বালা এবং এসিড রিফ্লেক্স এর কারণ হয়। যার ফলে
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং রাতের খাবারের পরে হালকা খাবার খাওয়ার কারণে বদ
হজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্বস্তি বোধ, এসবের মত এমন অনেক সমস্যার ঝুঁকি
বেড়ে যায়। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে, এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকেও আক্রমণ
করে।
রাত জাগার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ
একটি ঘুম বঞ্চিত মস্তিষ্ক, একটি মদ্যপানরত অবস্থার মস্তিষ্কের মতোই অকার্যকর। প্রতিক্রিয়ার সময়, সমন্বয়, বিচার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা সবকিছুতেই ব্যাহত হয়। যার ফলে আপনি দৈনন্দিন জীবনে দুর্ঘটনার জন্য বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়েন। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় ক্ষুদ্রা নিদ্রার ফলে দূরঘটনা ঘটে। যেখানে আপনি অচেতন হয়ে যান, অথবা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েন।
এটি সড়ক দুর্ঘটনার একটি প্রধান কারণ। রাত জাগার ফলে কাজের জায়গায় ভারী যন্ত্রপাতি চালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাড়িতে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া, কিছু ছেড়ে দেওয়া, ছুরি দিয়ে কেটে যাওয়ার মত দুর্ঘটনা। রাত জাগার এই ক্ষতিকর দিকটি শুধু আপনার জন্যই নয় বরং এটি আপনার চারপাশের মানুষের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরূপ।
রাত জাগার ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ
আমাদের শরীর অগণিত হরমোনের একটি সুসমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। যা মেজাজ থেকে শুরু করে বিপাক পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করে। এই প্রক্রিয়ার পরিচালক হলো আমাদের ঘুম জাগরণ শত্রু। রাত জাগার ক্ষতিকর অভ্যাস, এই পরিচালককে সরিয়ে দেয়। যার ফলে হরমোনের একটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় সৃষ্টি হয়।
কোর্টিসল (চাপের হরমোন), গ্রোথ হরমোন, থাইরয়েড হরমোন, যৌন হরমোন সবকিছুই
প্রভাবিত হয়। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ওজন বৃদ্ধি, মেজাজের ওঠানামা, ক্লান্তি,
চুল পরা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং আরো অসংখ্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা
দেয়। রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব আপনার পুরো শরীর জুরেই পরে।
সামাজিক এবং সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাবঃ
রাত জাগার কারণে আপনি পরের দিন বিরক্তিকর, ক্লান্ত এবং অসামাজিক হয়ে পড়েন।
বন্ধুদের সাথে দেখা করা, পরিবারের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানোর কোন শক্তি বা
উৎসাহ থাকে না। আপনি নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। যা আপনার
ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করে। মানুষ আপনাকে অভদ্র বলে মনে করতে
পা। ধীরে ধীরে, এটি একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দিকে পরিচালিত করতে
পারে।
এর কিছু অতিরিক্ত প্রভাবঃ
-
পরিবারের সদস্যদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ঃ রাত জাগার ফলে সকালে ওঠা কঠিন হয়,
ফলে পরিবারের সাথে ব্রেকফাস্ট বা অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
-
বন্ধুদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাঃ সন্ধ্যায় বা বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে না
পারার কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরে।
-
পেশাগত ক্ষেত্রে প্রভাবঃ কর্ম ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে অসহযোগিতা বা
খিটখিটে মেজাজ পেশাগত সম্পর্কের উপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
-
সামাজিক আড্ডায় অস্বস্তি অনুভবঃ ক্রমাগত ক্লান্তি এবং মন খারাপ আত্মবিশ্বাস
কমিয়ে দেয়।
-
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বা ঘুমের রুটিন মেনে চলা।
- সন্ধ্যায় মোবাইল বা ট্যাবের স্কিন টাইম সীমিত করা।
- শোবার আগে আরামদায়ক কাজ করা
- পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা।
শেষ কথাঃ রাত জাগার ক্ষতিকর দিক।
রাত জাগার ক্ষতিকর দিকগুলি সত্যিই বিস্তৃত এবং উদ্বেগ জনক। এটি একটি ধীর গতির বিষের মত,যা প্রতি পদে পদে আপনার জীবনীশক্তি, আনন্দ এবং সুস্থতা কেড়ে নেয়।রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আপনার ঘুমকে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার দিন। এটি কোন বিলাসিতা নয়, এটি একটি পরম প্রয়জনিয়তা। একটি নির্দিষ্ট ঘুমের সময়সূচি নির্ধারণ করুন। ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে ফোন, মোবাইল, ল্যাপটপ ও ইলেকট্রিক প্রযুক্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। একটি আরামদায়ক সোয়ার ব্যবস্থা তৈরি করুন।
আপনার বেডরুম কে ঘুমের জন্য উপযোগী করুন। মনে রাখবেন আপনি যখন ঘুমান, তখন আপনি কেবল বিশ্রামই নিচ্ছেন না, বরং আপনার ভবিষ্যৎকে একটু স্বাস্থ্যবান, সুখী এবং আরো প্রোডাক্টিভ জীবনের জন্য ইনভেস্ট করছেন। রাত জাগার ক্ষতিকর অভ্যাসটি ত্যাগ করে উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতই বদ্ধ হন। আপনার শরীর মন এবং আপনার সুস্থতা কামনা করছি। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। আপনি যদি আমার এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে পোস্টটি সবার কাছে শেয়ার দিবেন ধন্যবাদ।
আপনি গিগস্পারকলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url